লায়লা নূর ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ, অনুবাদক ও ভাষাসৈনিক। ১৯৫৭ সালে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে প্রথম মহিলা অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। লায়লা নূর ১৯৩৪ সালের ৫ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার গাজীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ অবিস্থত টাটা স্টিল কোম্পানির প্রকৌশলী। সেখানেই লায়লা বেড়ে ওঠেন। কুমিল্লায় এসে তিনি ১৯৪৮ সালে মাধ্যমিক, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ১৯৫২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও ১৯৫৪ সালে বিএ এবং ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন। লায়লা নূর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রথম নারী শিক্ষক। সেখানে তিনি টানা ৩০ বছর শিক্ষকতা করেন। ১৯৫৭ সালে ড. আখতার হামিদ খান ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালে তিনি চাকরিতে প্রবেশ করেন।
১৯৫২ সালে লায়লা নূর ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তিনি আন্দোলন-সংগ্রামে সব সময় সক্রিয় ছিলেন। ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙে লায়লা নূরসহ ২১ জন ছাত্রী পাকিস্তান পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে তিনি ২১ দিন কারাভোগ করেন এবং পরে মুক্তি পান। ভিক্টোরিয়া কলেজের ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ‘দি টিচার’ নামের একটি ম্যাগাজিন বের করতেন তিনি। সেখানে ইংরেজিতে লিখতে হতো।
পরে বিভিন্ন পত্রিকা ও সাময়িকীতে বাংলায় লিখেছেন। তার বেশি লেখা ছাপা হয়েছে তিতাশ চৌধুরীর সাহিত্য পত্রিকা অলক্তে। তিনি তিতাশ চৌধুরীর ১১৫টি কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। কুমিল্লার সাহিত্য ও সমাজসেবামূলক সংগঠন বিনয় সাহিত্য সংসদ শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য লায়লা নূরকে ‘বিনয় সম্মাননা পদক-২০১৪’ প্রদান করে। লায়লা নূর ২০১৯ সালের ৩১ মে কুমিল্লার সিডিপ্যাথ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।