ভোগাই নদীর বুক ঘেঁষে নামমাত্র দুই কক্ষ বিশিষ্ট ঘরে বসবাস শহিদুলের। বহুদিন হলো মারা গেছেন বাবা। অন্যদিকে বৃদ্ধ মা আয়েশা বেগম চাতাল শ্রমিক হলেও তিনি পেশা হারিয়েছে প্রায় বছর দশেক আগে।
সংসারে গৃহিণী স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে কষ্টেই জীবন পাড়ি দিচ্ছে শহিদুল। রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে এমনটাই বলছিলেন শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী পৌর এলাকার নালিতাবাড়ী বাজার বাসিন্দা মৃত: জোনাব আলীর পুত্র শহিদুল ইসলাম।
২০১৪ সালে জেলা রেজিষ্টার কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে নালিতাবাড়ি উপজেলা সাব রেজিষ্টার কার্যালয়ে নৈশ প্রহরী কাম ঝাড়ুদার পদে দৈনিক ৬০(ষাট) টাকা মজুরিতে হাজিরা ভিত্তিক কর্মী হিসেবে নিয়োগ পায় শহিদুল। ২০১৬ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো: হাসানুল মতিন স্বাক্ষরিত অর্থ বিভাগের প্রবিধি-৩ অধিশাখা জেলা ও উপজেলা এলাকায় কর্মরত দৈনিক দক্ষ শ্রমিকের মজুরি ৫৫০ ও অদক্ষ শ্রমিকের মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করলে ২০১৮ সালে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের উপ হিসাব মহানিয়ন্ত্রক কামরুননেছা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে দেশের সকল ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব একাউন্টস, চিফ একাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিসার, জেলা ও উপজেলা হিসাব রক্ষণকর্মকর্তা বরাবর দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিকদের পুন:নির্ধারিত মজুরি প্রদানের নিমিত্তে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
দেশের সকল অধিদপ্তরের আওতায় কর্মরত শ্রমিকদের মজুরি বাড়লেও বাড়েনি এস আর অফিসে কর্মরত শহিদুলদের দৈনিক মজুরি।
শহিদুল আবেগ তাড়িত হয়ে প্রায়ই শহরের অলিতে-গলিতে নিজ গলায় প্লেকার্ড ঝুলিয়ে বেতন বৃদ্ধির দাবীতে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে অঝোরে কাঁদতে থাকতেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শহিদুল জানান, দেশে সবার বেতনই বাড়ে খালি আংগর বেতন বাড়েনা। আমরাতো ভাত খাই না, পোশাক পড়িনা, ওষুধ লাগেনা! টেহা দিয়া কি করাম, ৬০ টেহা অইলেই চলে।
কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি আরো বলেন আমাদের এস আর অফিসে একজন কইরা লোক বিধায় আমরা আন্দোলন করবার পাইনা দেক্কাই আংগর বেতন বাড়ায় না সরকার। এহনতো দেশে বৈষম্য বিরোধী সরকার, তাইলে আমরা বৈষম্যের মধ্যে থাহাম কে?
পরিবারের উপার্জনক্ষম আর কোন সদস্য না থাকায় এই দৈনিক ৬০ টাকা বেতনে চাকরি করা দুরহ হলেও যদি বেতন বাড়ে এ আশায় পেশা বদলায়নি শহিদুল।
এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী সাব রেজিষ্টার শারমিন আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোন সুরাহা না করলে আমরা কোন স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী সমাধান দিতে পারবোনা।