হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে উপজেলা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে উপজেলার উবাহাটা ইউনিয়নে হাতুরাকান্দি এলাকায় রাতভর চলছে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার মহোৎসব। যে কারণে উর্বরতা হারাচ্ছে জমি আর ভেঙে যাচ্ছে এলাকার রাস্তাঘাট। এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষ এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাতুরাকান্দি এলাকায় পরিবেশ আইন অমান্য করে প্রতিদিন রাতভর কৃষি জমি উপরিভাগের মাটি কেটে সরবরাহ করে বিক্রি করছে উপজেলাসহ পার্শবর্তী উপজেলা শায়েস্তাগঞ্জ, বাহুবল ও মাধবপুর উপজেলায়। আর সেইসব মাটি যাচ্ছে ইঁট ভাটা, হাট বাজারে, দোকানপাঠে, বাসা-বাড়িতে ও শিল্প কারখানায়। ফলে কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য ও হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশ আইন অনুযায়ী কৃষি জমি মাটি কাটা দন্ডনীয় অপরাধ।
কৃষিবিদদের মতে, জমির উপরিভাগের চার থেকে ছয় ইঞ্চি গভীর মাটিতেই মূল পুষ্টি গুণ থাকে। মাটির এই স্তর কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতার শক্তি নষ্ট হচ্ছে। এ জন্য অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করে ও কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। এতে সারের পেছনে কৃষকের অতিরিক্ত খরচ করতে হবে।
জেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, সাধারণত একখানি জমিতে প্রায় ৩৫ কেজি ইউরিয়া সার দিতে হয়। কিন্তু টপ সয়েল কেটে নেওয়া জমিতে এর দ্বিগুণ সার দিতে হয়। ফলন ও স্বাভাবিক চেয়ে কম হবে। এ ভাবে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে কৃষি জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার উবাহাটা ইউনিয়নে হাতুরাকান্দি এলাকায় রাতভর ফসলি জমি থেকে এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ভূমি দস্যুরা। তাদের পেছনে কোনো অদৃশ্য শক্তি রয়েছে বলে এলাকায় চলছে নানা সমালোচনা।
উবাহাটা ইউনিয়নের এক অটোরিকশা চালক মোঃ কামাল মিয়া বলেন, ড্রাম ট্রাক, ডায়ানা ট্রাক, পাওয়ার ট্রলি, ট্রাক্টর দিয়ে মাটি বহনের ফলে পথচারী গ্রামীণ সড়ক-সহ চুনারুঘাট হতে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজ পাকা সড়ক গুলো অনেক ক্ষতি হচ্ছে। ইউনিয়নের সচেতন লোকজন নিষেধ করলেও ভূমি দস্যুরা এসব কথা কর্ণপাত করে না। চলতি ইট উৎপাদন মৌসুমে দেদারসে সরবরাহ করা হচ্ছে ইঁট ভাটায়, শিল্প কারখানায়, হাট-বাজারে,দোকান পাঠে ও বাসাবাড়ির বিট বরাট চলছে এসব মাটি দিয়ে।
প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ঘটলেও দেখার কেউ নেই। এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। দুই ফসলি কৃষি জমি ও বিভিন্ন তরিতরকারি ফসল উৎপাদন হলেও জমির মালিকের নানা প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছে ভূমি দস্যুরা।