ছবিঃ সংবাদ সারাবেলা।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের গহড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জব্বার। অভাবের সংসারে টেনেটুনে ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়ার ইতি ঘটে।সংসারের চাহিদা ও আর্থিক যোগান দিতে দিনমজুরের কাজ শুরু করেন। তাতেও যখন অভাবের সংসারের চাহিদা মিটে না তখন সিএনজি অটোচালক হিসেবে মনোনিবেশ করেন। প্রথম দুই বছর অটো চালান পরে ৮ থেকে ১০ বছর সিএনজি চালিয়ে কোন রকমের সংসারের হাল ধরলেও কালের পরিক্রমায় সময়ের পরিবর্তনে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি পরিবারে নানা সমস্যা, নিত্য নতুন জিনিসের চাহিদা বাড়তে থাকে। আবার সংসার চালাতে হিমশিম ভাবনায় চোখে মুখে চিন্তার চাপ মনে প্রেশানি নিয়ে নতুন কিছু করার চিন্তা ভাবনায় মগ্ন হয়ে পড়েন। যেমনি ভাবনা তেমনি কাজ। এই যে একে নতুনভাবে তৈরি ও উদ্ভাবিত করতে নেমে পড়েন কৃষি মাঠে। শুরু করেন তরমুজ চাষ। তরমুজ চাষে প্রথম বছরে ৩ বিঘা জমিতে তার কিছুটা লস হয় কিন্তু অভিজ্ঞতা অর্জন হয়। হাল ছাড়েননি। পরের বছর আট বিঘা জমিতে তরমুজ,কেরেলা,ফরাস, শশা ও টমেটো চাষ করেন। তখন ২০১৪ সাল এরপর থেকে আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বছরে বছরে বৃদ্ধি করেছেন শীতকালীন সবজি আবাদ। এ বছর জব্বার ৫০ বিঘা জমিতে হরেক রকম শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলার দুর্গম সীমান্তঘেঁষা সদর ইউপির গহড়া চর ঘুরে দেখা গেছে,গাছে ও মাচায় ঝুলছে হলুদ-সবুজ রঙের টমেটো। সবুজ, হলুদ আর পাকা টমেটোগুলো সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে। শ্রমিকদের সঙ্গে টমেটো গাছের পরিচর্যার পাশাপাশি গাছ থেকে পাকা টমেটো তুলছেন কৃষক আব্দুল জব্বার।
পরিচর্যার ফাঁকে ফাঁকে সফল কৃষক আব্দুল জব্বারের সাথ কথা বলে জানা যায়,২০১৩ সালে তিন বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে কিছুটা লস হয়। পরের বছর ৮ বিঘা জমিতে অনেক জাতের শীতকালীন সবজি আবাদ করেন। সেই বছর টমেটোর ভালো ফলন ও মুনাফা বেশি হওয়ায় সেই থেকে টমেটো চাষকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। বিভিন্ন জমির মালিকের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে এ বছর তিনি পঞ্চাশ বিঘা জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ করেছেন। তারমধ্যে রয়েছে ২৭ বিঘা জমিতে টমেটো,৬ বিঘা জমিতে তরমুজ,২০ বিঘা জমিতে মিষ্টি লাউ,তিন বিঘা জমিতে শসা এক বিঘা জমিতে বেগুন ও চার বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের কাঁচামরিচ চাষ করেছেন। তার খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ১৬ লক্ষ টাকা। এ পর্যন্ত তার বিক্রি করে খরচ বাদে মুনাফা হয়েছে ৩২ লক্ষ টাকা এবং জমিতে যে পরিমাণ ফসল রয়েছে আরও ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকার মত বিক্রি আসবে। সর্বমোটে তার খরচ বাদে অর্ধ কোটি টাকার উপরে লাভ হবে।বছরের ছয় মাস তার শীতকালীন সবজি আবাদে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করে তাদের সংসার চলে।তিনি জানান,আগস্ট মাস থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর এর মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন জাতের শীতকালীন সবজি আবাদ করে তা বিক্রি করে পুজি তৈরি করে নেন। আলাদা পূজির জন্য তাকে আর টেনশন করতে হয় না।আব্দুল জব্বার আরো বলেন,প্রথম প্রথম তার এই কাজে আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা তামাশা রং ঢং করেছে।এখন তারাই আবার তাকে নিয়ে গর্ববোধ করে তার এই কাজে তাকে উৎসাহিত করে তার নাম দিয়েছে টমেটো জব্বার।তার কাজের সফলতার স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে এই নামে ডাকায় তিনি গর্ববোধ করেন। মনে তৃপ্তি পান এই ভেবে যে তিনি সফল হতে পেরেছেন। মানুষ তাকে যে নামেই ডাকুক তিনি কাজে সন্তুষ্ট। তিনি বলেন,কৃষি কাজে কোন নির্দিষ্ট সময় নেই,দিন রাত সমান পরিশ্রম করতে হবে। সময় বেঁধে কাজ করলে সফলতা আসবে না। সকলের প্রতি তার আহবান সকলে যেন কৃষি কাজে সংযুক্ত হয়। তার পরামর্শ সহযোগিতা থাকবে। জব্বার বলেন যে পরিবারে চার-পাঁচজন সদস্য রয়েছে,তারা যেন বিদেশ যাক অসুবিধা নেই,দুই একজন যাতে কৃষিকাজে অন্তর্ভুক্তি হয়। কৃষিতে এক টাকা খরচ করলে ৫ টাকা মুনাফা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের সোনার মাটির যত্ন করলে কেউ বিফল হওয়ার কোন সুযোগ নেই। সত্যিকারের পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। বাকি সদস্যরা অন্য কাজে মনোনিবেশ করতে পারে।জব্বার বলেন পাথর কোয়ারীতে যে পরিশ্রম দিতে হয় তার অর্ধেক পরিশ্রম কৃষিতে লাগে না। তারপরও কেন মানুষের কৃষির প্রতি অনীহা থাকবে। এটা আমার বোধগম্য নয়।
রোটারিয়ান সাংবাদিক সাবেক চেয়ারম্যান এম এ রহিম বলেন,জব্বার একজন আদর্শ কৃষক, সে আমাদের গ্রামের গর্ব। আমি সময় পেলে তার বাগান পরিদর্শন করি এবং তাকে কাজে পরামর্শ দিয়ে উৎসাহিত করি। আমরা এলাকাবাসী তাকে এক নামে ডাকি টমেটো জাম্বার বলে। এটা তার কাজের অর্জন।পাশাপাশি তার বাগানে রাসায়নিক ওকীটনাশকমুক্ত টাটকা টমেটো।এটা খেলে ক্ষতিকর কোন প্রতিক্রিয়া নেই।
সদর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সুমন বলেন,জব্বার আমার ইউনিয়নের এমনকি উপজেলার একজন আদর্শ কৃষক। তাকে কাজে উৎসাহিত করতে গত বছর আমি ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক দিয়েছি। এ বছরও তাকে সফল একজন কৃষক হিসাবে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হবে। তিনি উপজেলার সকলকে জব্বারের মত কৃষিতে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহবান জানান এবং কৃষিতে জব্বার এর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রায়হান পারভেজ রনি বলেন, টমেটো চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। যার অনন্য দৃষ্টান্ত কৃষক আব্দুল জব্বার। কঠোর পরিশ্রম ও সঠিক পরামর্শে টমেটো চাষে বিপ্লব সাধন করে উপজেলার কৃষিপণ্যের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। টমেটো চাষে জব্বার উপজেলা কৃষকদের জন্য অনুকরণী ও অনুসরণীয় ব্যক্তি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh