কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে পাটাতনে গর্তেভরা রেলিং বিহীন একটি সেতু এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এতে প্রতিদিন ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। উপজেলার বড়ভিটা বাজার-বড়ভিটা উচ্চ বিদ্যালয় গামী সড়কের বামনেরকুড়া নালার উপর নির্মিত সেতুর এমন রুগ্ন দশায় পথচারীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। সেতুটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এদিকে স্থানীয় প্রকৌশল দপ্তর সেতুটি সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছে।
স্থানীয় প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫-৯৬ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় প্রকৌশল দপ্তর ৫ লক্ষ ৭ হাজার টাকা ব্যয়ে বামনেরকুড়া নালার উপর ২০মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণ করে। নির্মাণের পর দীর্ঘদিনেও হয়নি সেতুটির সংস্কার। ফলে বেহাল হয়ে পড়েছে সেতুটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুর পাটাতনের নানা জায়গায় পলেস্তারা খসে গিয়ে রড বের হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। খুলে গেছে সেতুর দুই পাশের রেলিং। ধসে পড়েছে সেতুর দুই প্রান্তের গাইড ওয়াল। তবু নানা প্রয়োজনে এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর উপর দিয়েই বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়ত করছেন অনেক মানুষ। এছাড়াও বড়ভিটা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, বড়ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই সেতু দিয়েই বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। সেতুর আশপাশের গ্রামের প্রসূতি মা ও শিশু স্বাস্থসেবা নিতে সেতুটি দিয়ে বড়ভিটা কমিউনিটি ক্লিনিকে আসা-যাওয়া করছেন। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যে কোন সময় প্রাণহানির মতো মর্মান্তিক দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সেতু অদূরের বাসিন্দা ও বড়ভিটা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর ছাত্তার খন্দকার বলেন, 'সেতুটি দিয়ে শিশু শিক্ষার্থীরাও স্কুলে যাতায়াত করে। সেতুর পাটাতনে গর্ত আর রেলিং না থাকায় যেকোন সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। সেতুটি সংস্কার জরুরী।' স্থানীয় সরলা রাণী বলেন, সেতুতে গর্তের কারণে কোন যানবাহন যাতায়াত করতে পারেনা। আজকে আমার গর্ভবতী মেয়েকে নিয়ে পায়ে হেঁটে ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে।'
আসাদুল হক, শহিদুল ইসলাম, মানিক মিয়াসহ বেশ কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ' সেতুটি দিয়ে আমাদের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাতায়াত করতে ভয় পায়। আমরাও ছেলেমেয়েদের নিয়ে চিন্তায় থাকি। না জানি কখন কি ঘটে। এভাবে আর কতদিন চলবে? আমরা এখানে একটা প্রশস্ত সেতু নির্মাণে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাচ্ছি।'
বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জান্নাতি খাতুন বলেন, 'সেতুর বেহাল দশার কারণে ইউনিয়ন পরিষদের যাবতীয় মালামাল আনা নেয়া করতে অসুবিধা হচ্ছে। স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও চলাচলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। জনভোগান্তি নিরসনে সেতুটি পুনঃনির্মাণের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে জানিয়েছি।'
উপজেলা প্রকৌশলী মামুনুর রহমান বলেন, ' সেতুটি পুনঃনির্মাণের জন্য প্রাক্কলন ও নকশা প্রণয়ন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে সেতু পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।'