× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

কালারমারছড়া পুলিশ ক্যাম্পে দালালদের দৌরাত্ম্য, এসআই রাজিবের বিরুদ্ধে ‘বিচারের নামে’ ঘুষ গ্রহণ করে মারধর ও জোরপূর্বক মিমাংসার অভিযোগ

কক্সবাজার প্রতিনিধি।

১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:৪২ পিএম

ছবি: সংবাদ সারাবেলা।

কক্সবাজারের মহেশখালী থানার আওতাধীন কালারমারছড়া পুলিশ ক্যাম্পে পূর্বের ন্যায় বেড়েছে দালালের দৌড়াত্ম্য। অভিযোগ রয়েছে দালাল না ধরলে পাওয়া যায় না কাক্সিক্ষত সেবা। এমনকি দালালের মাধ্যমে ক্যাম্পে নিয়মিত সালিশ বসাচ্ছে পুলিশ। সেখানে অর্থ আত্মসাৎসহ জায়গা-জমি দখল ও দখলমুক্ত করতে বিচার করা হচ্ছে চুক্তির বিনিময়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ কালারমারছড়া বাজার বণিক সমিতির সভাপতির নাম ভাঙ্গিয়ে সহ-সভাপতি জাকারিয়া নিজেকে বাজার কমিটির সভাপতি দাবী করে পুলিশ ক্যাম্প বিচার ও শালিস কেন্দ্রের হাট বসিয়েছেন। অতচ বাজার কমিটির সভাপতি এসব বিষয়ে অবগত নয়। তিনি এলাকার বাইরে অবস্থান করেন। এতে সুনামধন্য বাজার কমিটির মান মারাত্মক ক্ষুন্ন হচ্ছে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

মহেশখালী থানার নবাগত ওসি মুজিবুর রহমান বলেন, ‘তালিকা দেন- দেখি কে দালাল’। দালাল যেন ক্যাম্প প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে এসব দালাল সিন্ডিকেট মিলেমিশে সুবিধা নিয়ে তারা পুলিশ প্রসাশনকে বিতর্কিত করতে নানা অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। 

জানাগেছে, কালারমারছড়া পুলিশ ক্যাম্পটি দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পরেও আইনশৃংখলা সমুন্নত রাখতে জেলা পুলিশ কালারমারছড়া বাজারে আজাদ বোডিং এর উপরে পুরোদমে চালু করেন কালারমারছড়া পুলিশ ক্যাম্পটি। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে নিরাপত্তার সঞ্চার হয়।  কিন্তু মহেশখালী থানার কালারমারছড়া পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই রাজিব শাহার বিরুদ্ধে বিচারের নামে এক ব্যক্তিকে মারধর, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং জোরপূর্বক আর্থিক মিমাংসার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, দালাল সিন্ডিকেটের সদস্যের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাম্পে ডেকে এনে শারীরিক নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি দোকান বন্ধক সংক্রান্ত স্ট্যাম্প ও কাগজপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দেওয়া হয়। ভোক্তভোগির ওপর পুলিশ ক্যাম্পের টর্চার সেলে গিয়ে নির্যাতনের একটি বক্তব্য প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

কালারমারছড়ার চিকনি পাড়ার বাসিন্দা ভুক্তভোগী আবু বক্কর ছিদ্দিক (৫০) অভিযোগ করে জানান, কালারমারছড়া বাজারের একটি দোকান বন্ধক সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাকে ‘বিচার’ করার কথা বলে পুলিশ ক্যাম্পে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে এসআই রাজিব শাহা তাকে পুলিশ ক্যাম্পের অঘোষিত টর্চার সেলে গিয়ে গিয়ে লাঠিচার্জ, চড়-থাপ্পড়সহ শারীরিকভাবে মারধর করেন এবং মূল স্ট্যাম্প আনতে চাপ দেন। এসময় বাজার কমিটির সহ-সভাপতি নামধারী ওই দালাল হেনস্ত করেন। এতে যার কাজ থেকে বন্ধক নিয়ে তার সাথে মোটা অঙ্কের লেনদেনের বিনিময়ে কন্ট্রাক করে মিলেমিশে টাকার একটি অংশ ভাগবাটোয়ারা করে হাতিয়ে নিয়েছেন এস আই রাজিবসহ ওই দালাল এমনটি মনে করছেন ভোক্তভোগি। 

একপর্যায়ে জোরপূর্বক সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দোকান বন্ধকের ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের চুক্তিপত্র কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আবু বক্কর ছিদ্দিক আরও বলেন, দোকান বন্ধকের মোট ৩ লাখ টাকার পরিবর্তে মাত্র ১ লাখ টাকা দিয়ে বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে- এমন বক্তব্য জোর করে ভিডিও ধারণ করা হয় এবং অন্য একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিতে বাধ্য করা হয়। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে কোথাও অভিযোগ করলে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয় বলেও তিনি দাবি করেন। তিনি এ ঘটনায় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এবিষয়ে দেওয়াদ বিন করিম নামে একজন মন্তব্য করে লিখেছেন, এস আই রাজিব ওসি প্রদীপের ভুমিকায় আছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কালারমার ছড়া পুলিশ ক্যাম্পের আইসি এসআই রাজিব শাহা ভুক্তভোগীকে মারধর বা নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, বিষয়টি কালারমার ছড়া বাজার কমিটির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে মিমাংসা হয়েছে এবং পুলিশ কোনো জবরদস্তি করেনি।

তবে কালারমার ছড়া বাজার কমিটির পক্ষ থেকে ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে। বাজার কমিটির প্রতিনিধিরা জানান, বিচারটি (শালিস) থানার পক্ষ থেকে এসআই রাজিব শাহার মাধ্যমেই হয়েছে। তারা আরও বলেন, স্ট্যাম্প আনার সময় ভুক্তভোগীকে পুলিশ হুমকি-ধমকি ও থাপ্পড় দিয়েছিল। পরে পুলিশের ভয়ে বা অন্য কোনো কারণে ভুক্তভোগী বিষয়টি মিমাংসা করতে বাধ্য হন বলে তাদের ধারণা।

কালারমার ছড়া বাজার কমিটির সহ-সভাপতি মো. জাকারিয়া বলেন, বিচারটি (শালিস) থানার মাধ্যমে এসআই রাজিবই করেছিলেন এবং বাদী-বিবাদীর মুখজবানির ভিত্তিতেই সেটি পরিচালিত হয়।

এদিকে স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিনের দাবির পর কালারমার ছড়ায় পুলিশ ক্যাম্প (বিট) স্থাপন করা হয় মূলত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য। অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত কালারমার ছড়ায় এ ক্যাম্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে- এমন প্রত্যাশা থাকলেও বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দালাল নিয়ন্ত্রণ, বিচারকে কেন্দ্র করে অনিয়ম এবং পরিবহনসহ বিভিন্ন খাত থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠছে।

অভিযোগ আছে, কালারমারছড়া পুলিশ ফাঁড়ীর ইনচার্জ এস আই রাজিবের নিজস্ব দালাল রয়েছে। দালালরা প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় সমাধানে পার্টির সঙ্গে অর্থের চুক্তি করে পছন্দের পুলিশ কর্তাদের দিয়ে থানায় প্রায় নিয়মিত সালিশ বসাচ্ছেন। বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষকে ক্যাম্পে ডেকে ইচ্ছেমতো দেওয়া হয় রায়। এতে অনেক সময় বাদী-বিবাদী দুই পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হন এমন অভিযোগও রয়েছে। এক ভুক্তভোগী জানান, সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছে সেবা নিতে অনেক সময় নিরাশ হয়ে ফিরে যান। দালাল ধরলে মেলে কাক্সিক্ষত সেবা। দালাল না ধরলে পুলিশও সেবা দিতে আগ্রহ দেখায় না। কালারমারছড়া পুলিশ ক্যাম্প দালালমুক্ত চান তিনি।

কালারমার ছড়া বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মৌলানা বোরহান উদ্দিন জানান, দোকান বন্ধক নিয়ে এক ব্যবসায়ী ও আবু বক্কর ছিদ্দিকের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। বিষয়টি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় উভয় পক্ষকে মিমাংসার জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সময়ের আগেই এক পক্ষ পুলিশকে অভিযোগ করলে পুলিশ ভুক্তভোগী আবু বক্করকে ডেকে এনে নির্যাতন করে এবং ৩ লাখ টাকার পরিবর্তে ১ লাখ টাকা দিয়ে জোরপূর্বক মিমাংসা করানো হয়েছে- এমন অভিযোগ ওঠে।

মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন এবং এ প্রতিবেদকের কাছ থেকেই প্রথম শুনেছেন। অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.