সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা তাঁত সমৃদ্ধ এলাকা হওয়ার সুবাধে তাঁতের শাড়ির সুনাম রয়েছে দেশ-বিদেশ জুড়ে , বেলকুচির ঐতিহ্যবাহী তাঁতের সুতি শাড়ির পাশাপাশি জামদানি শাড়ি ও বেশ জনপ্রিয়। প্রায় ১০-১৫ বছর ধরে বেলকুচিতে ব্যাপকভাবে উৎপাদন শুরু হয়েছে। একই সুতায় রং ডিজাইন করে উৎপাদন হচ্ছে শাড়ি , বেলকুচির তাঁত পল্লী গুলো ভোর থেকে রাত পর্যন্ত শ্রমিকরা পাওয়ারলুম - পিটলুম ও হস্ত চালিত তাতে নিখুঁতভাবে তৈরি হচ্ছে জামদানি , সুতি কাতান , সুতি জামদানি , সিল্ক শাড়ী , রেশম শাড়ী, গ্যাস শাড়ী।
করোনা মহামারির মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে তাঁতশিল্পের সাথে জড়িত মানুষেরা খারাপ সময় পার করছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে তাঁতের তৈরি কাপড়ের বাজারে চলছে মন্দা অবস্থা। যার আঁচ পড়েছে সিরাজগঞ্জের তাঁতশিল্পেও। বাইরের পাইকারী ব্যবসায়ীদের সংখ্যা কমে গিয়েছে। ফলে শাড়ী, কাপড়, লুঙ্গি দেশের বাইরে রপ্তানিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে। নতুন করে এই শিল্পটিকে দাঁড় করাতে সরকারি প্রণোদনা ও স্বল্পসুদে ঋণের দাবি তাঁত কারখানা মালিকদের।
তাঁত মালিক সাইফুল ইসলাম ( নুরু ) জানান, দেশের দূর-দূরান্ত থেকে পাইকারি শাড়ি কাপড় কেনার জন্য নিয়মিত ক্রেতারা এই এলাকায় আসেন , পাশাপাশি অনেক ক্রেতা নিজেরা ব্যবহার করার জন্য আমাদের কাছে এসে শাড়ি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন , আমাদের এখানে সীমিত লাভ করে শাড়ি কাপড় বিক্রি করা হয় , খুচরার চেয়ে পাইকারি বেশি বিক্রি হয়। বর্তমানে সুতা ও রং এর দাম বৃদ্ধির ফলে লাভের মুখ দেখতে পারছে না অনেক তাঁতী। সরকারের কাছে আমাদের দাবী তাঁতশিল্পের প্রসার বৃদ্ধিতে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান সেইসাথে সুতা,রং এর দাম কমাতে হবে।
এ বিষয়ে উন্নয়ন অনুসন্ধান ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়কারী খন্দকার মোহাম্মাদ আলী জানান, বেলকুচিতে হস্তচালিত তাঁত সহ বিভিন্ন শ্রেণীর প্রায় ৬০,০০০ তাঁত রয়েছে , এগুলোর নাম হচ্ছে পিটলুম ও পাওয়ারলুম তাঁত, এই শিল্পে আট হাজারেরও বেশি তাঁত ফ্যাক্টরির মালিক আছেন , এবং নারী -পুরুষ মিলিয়ে এক থেকে দেড় লাখেরও বেশি শ্রমিক এই পেশার সাথে জড়িত , এই শিল্পের একজন শ্রমিক সাধারণত হস্তচালিত তাঁতের একদিনে একটি শাড়ী তৈরি করতে পারেন , আর পাওয়ারলুম এ দিনে দুইটি শাড়ি তৈরি করতে পারে , তবে বেশি মাত্রার সূক্ষ্ম কারুকাজ করা শাড়ি তৈরি করতে সময় লাগে বেশি, শাড়ি তৈরীর পর ফুল তোলা বা নকশা কাটার বাড়তি সুতা কাঁচি দিয়ে কেটে চূড়ান্তভাবে নকশা ফুটিয়ে তোলেন মহিলা শ্রমিকরা , একজন পুরুষ শ্রমিক দিনে ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ও মহিলা শ্রমিক বাড়ির কাজের ফাঁকে ফাঁকে চরকা কাটা ও নকশা কাটার কাজে দিনে ৫০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন।