বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী
২০২৪ সালে যেন শূন্য থেকে পূর্ণতা পেয়েছে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী। আওয়ামী শাসনামলে দলটির নীতিনির্ধারণীর বেশ কয়েকজনকে যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগে মৃত্যুদ্বন্দ্ব কার্যকর করা হয়। এছাড়াও দেড়যুগে প্রকাশ্যে করতে পারেনি কোনো সভাসমাবেশ। আওয়ামী লীগের পতনের কিছুদিন আগে নিষিদ্ধ করা হয় দলটি।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দেড় যুগ পর স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রমে ফিরেছে জামায়াত। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদ শাসনে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত দল এখন অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়গুলো চালু করা হয়েছে। নিষিদ্ধ দলটি এখন রাজনীতির সম্মুখভাগে চলে এসেছে। নিষিদ্ধ প্রজ্ঞাপন বাতিল হয়েছে। অন্যদিকে দল গোছাতে সারা দেশে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে দলটি। প্রায় এক যুগ ধরে কোণঠাসা হয়ে থাকলেও এবার রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে চায় তারা।
গত ৫ আগস্টে রাষ্ট্রক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাপাত্তা। একদিকে ভাঙচুর, লুটপাট, হাট-বাজার, টেম্পো ও বাসস্ট্যান্ডে দখল করে অনেকটা বিতর্কের মুখে পড়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে পরিবর্তন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই মুহুর্তে অনেক বেশি প্রশংসা কুড়িয়েছে দলটি। দেশের সংখ্যালঘুরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখছে দলটি। হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘর পাহারা দিয়েছে, তাদেরকে নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেছে জামায়াত। মানুষের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করছে দলটি। ইতোমধ্যে দলটি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কাছে বেশ প্রশংসা পেয়েছে। হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলটির নেতারা।
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন
গত ১ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারির মধ্য দিয়ে জামায়াত ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে আওয়ামী লীগ সরকার। নিষিদ্ধের ৪ দিন পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। পটপরিবর্তনের পর গত ২৮ আগস্ট জামায়াতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। জামায়াতে ইসলামী, এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির বা এর কোনো অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও সহিংসতায় সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানায় সরকার। এখন নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় আছে দলটি।
১৪ বছর পর আজান দিয়ে কার্যালয় খুলল জামায়াত
হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৪ বছর পর দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর কার্যালয় প্রবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পালানোর পর ৫ আগস্ট রাতে দলটির নেতাকর্মীরা মগবাজারে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান। এসময় নেতারা দীর্ঘদিন পর কার্যালয়ে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বিশেষ মোনাজাত করেন।এরপর তারা পুরানা পল্টনে মহানগর কার্যালয়েও যান। এখন সারাদেশের দলীয় কার্যালয়গুলোর সচল করেছে জামায়াত।
সেনাপ্রধানের বৈঠকে জামায়াতের আমির
হাসিনার পতনের পরে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংকট নিরসনে ৫ আগস্ট বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সেই বৈঠকে ডাক পান জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। বৈঠক শেষের সেনা প্রধান সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকলেও তখন শুধু জামায়াত আমিরের নাম উল্লেখ করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতির বৈঠকে জামাত
স্বৈরশাসক হাসিনার পতনের পরে দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৫ আগস্ট বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও সমাজের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে বঙ্গভবনে বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সেই বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান আমন্ত্রণ পান।
১৯ বছর পর প্রকাশ্যে রুকন সম্মেলন
জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে অনুকূল পরিবেশ পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ১৯ বছর পর প্রকাশ্যে বড় পরিসরে রুকন সম্মেলন করছে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা। গত ১৩ অক্টোবর রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। একই স্থানে গত ১৮ অক্টোবর ঢাকা দক্ষিণ জামায়াতের রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক
বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করে জামায়াতে ইসলামী। গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর গুলশানে জাতিসংঘের আবাসিক কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরের নেতৃত্বে দলটির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এই বৈঠকে অংশ নেয়।
আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে জামায়াতের আর্থিক সহায়তা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে যে সকল ছাত্র জনতা নিহত হয়েছে তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে আছে জামায়াত। প্রতিটা পরিবারের মাঝে নগদ এক লাখ টাকা অর্থ সহায়তা দিয়েছে দলটি। এছাড়া আহত অবস্থায় যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে দলটি। হাসপাতালে গিয়ে তাদের সার্বিক খোঁজখবর নেওয়া সহ আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।
৯ বছর পর সোনারগাঁও হোটেলে জামায়াতের ইফতার
প্রায় ৯ বছর পর রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনদের নিয়ে রাজধানীতে বড় পরিসরে ইফতার মাহফিলের করেছে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গত ৩০ মার্চ রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে এই ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হওয়ার হয়। এর আগে ২০১৫ সালের ২৫ জুন হোটেল সোনারগাঁওয়ে রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ বিশিষ্টজনদের নিয়ে ইফতার করেছিল জামায়াতে ইসলামী।
চীন সফর জামায়াতের
চীন সরকারের আমন্ত্রণে চীন ৮ দিন সফর করেছে বাংলাদেশ বাংলাদেশ জামায়াতেব ইসলামীর একটি প্রতিনিধি দল। গত ২৭ নভেম্বর রাত সোয়া ১১টায় চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে ঢাকা ত্যাগ করেন তারা।
বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের সঙ্গে বৈঠক
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়তে তৎপরতা শুরু করেছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিকরা নতুন করে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিগত শেখ হাসিনা আমলে সরকারের আমলে অনেক বিদেশি কূটনীতিক বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করতে স্বস্তি পেতেন না। অনেক দেশের কূটনীতিক সে সময়েও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে এড়িয়েও চলেছেন। তবে পরিস্থিতি এখন বদলেছে। তাই কূটনীতিকরাও এখন আর বসে নেই।
ইসলামী দল নিয়ে নির্বাচনী ঐক্যের প্রক্রিয়া
ইসলামপন্থিদের নিয়ে নির্বাচনি জোট গড়ার চেষ্টা ইসলামপন্থি কয়েকটি দলের সঙ্গে ‘নির্বাচনি ঐক্য’ গড়ে সংসদ নির্বাচনে লড়ার চিন্তা করছে জামায়াতে ইসলামী। এ লক্ষ্যে দলটি ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ইসলামি দল এবং আলেমদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছে। জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতারা জানান, বিভিন্ন কারণে বর্তমান বাস্তবতায় বিএনপির সঙ্গে তাদের বনিবনা হওয়ার সম্ভাবনা কম। আগামী সংসদ নির্বাচনে ভালো রেজাল্টের জন্য ইসলামপন্থিদের সঙ্গে একটি নির্বাচনি ঐক্য গড়তে চাইছেন। যদিও তা এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো রূপ নেয়নি।
বাড়ছে জামায়াত-বিএনপির দূরত্ব
৫ আগষ্টের পর থেকেই বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব দৃশ্যমান হতে থাকে। দেশের বিভিন্নস্থানে বিএনপি-জামায়াত এবং ছাত্রদল-শিবিরের সাথে একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায়ও ঘটেছে।বিশেষ করে জামায়াত চাচ্ছে সকল সংস্কার শেষ জাতীয় নির্বাচন। আর বিএনপি চাচ্ছে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষেই নির্বাচন।
এদিকে আগামী নির্বাচনে জামায়াত এককভাবে ৩শ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা করলেও আবার অন্য কয়েকটি ইসলামি দল নিয়ে মোর্চা গঠন করছেন। অন্যদিকে বিএনপিও নির্বাচনকে সামনে রেখে মিত্র দলগুলোর সাথে সংলাপ করে যাচ্ছেন এঝানেও নেই জামায়াত। সব মিলিয়ে দল দুটির দূরত্ব এখন দৃশ্যমান।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh