ছবিঃ সংগৃহীত।
সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রী পরগণার তেঘরিয়া গ্রামে ১৮৫৪ সালের আজকের এই দিনে (২১ ডিসেম্বর), (৭ পৌষ ১২৬১ বঙ্গাব্দ) মরমী কবি, সংগীত সাধক, দার্শনিক হাছন রাজা এক ধনাঢ্য জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আজ হাছন রাজার ১৭০তম জন্মবার্ষিকী। জমিদার পরিবারের সন্তান হলেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন মানবতাবাদী এক কবি, যার সুর ও সৃষ্টিকর্ম আজও মানুষের হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে।
হাছন রাজার
জীবনের নানা দিকেই রয়েছে গভীর বৈচিত্র্য। জমিদার পরিবারের সন্তান হওয়ায় তিনি কৈশোরে
বিশাল জমিদারির দায়িত্ব নেন। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, রামপাশা, লক্ষণশ্রী এবং সিলেটের
একাংশ জুড়ে তার জমিদারি বিস্তৃত ছিল। কিন্তু একসময় তিনি বিত্ত-বৈভব আর ক্ষমতার মোহ
ছেড়ে এক আধ্যাত্মিক জীবনের দিকে ধাবিত হন। তিনি বুঝতে পারেন, স্রষ্টার অনুসন্ধান বাহিরে
নয়, নিজের ভেতরেই।
হাছন রাজা
পরাক্রমশীল জমিদার ছিলেন। একসময় তিনি তার সম্পদ জনকল্যাণে দান করে দিয়ে কয়েকজন সঙ্গিনী
নিয়ে হাওরে হাওরে ভাসতে থাকেন। গুণী এই মরমি কবি বাংলা ভাষাভাষি মানুষ ছাড়াও উপমহাদেশেও
সমাদৃত। শিশুকাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত লক্ষণশ্রীই ছিল তার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা।
হাছন রাজার
বাবা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ছিলেন প্রতাপশালী জমিদার। হাছন রাজা তার তৃতীয় পুত্র।
মায়ের নাম ছিল হুরমত বিবি। বাবা-মা উভয়ের কাছ থেকে পাওয়া সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, রামপাশা,
লক্ষণশ্রী আর সিলেটের একাংশ নিয়ে বিশাল অঞ্চলের জমিদার ছিলেন মরমী গীতিকবি হাছন রাজা।
১৫ বছর বয়সে তিনি জমিদারিতে অভিষিক্ত হন।
হাছন রাজা তার গানের মাধ্যমে মানুষের মনের গভীরে স্থান করে নিয়েছেন। ‘আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে', ‘আমি না লইলাম আল্লাজির নাম রে', ‘লোকে বলে ঘরবাড়ি ভালানা আমার', ‘গুড্ডি উড়াইল মোরে'—এমন অসংখ্য গান মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯০৭ সালে তার ২০৬টি গানের একটি সংকলন ‘হাছন উদাস' প্রকাশিত হয়। এছাড়াও তার গান বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
হাছন রাজার গানের বিচিত্রতা লক্ষ্যণীয়। তিনি লিখেছেন প্রেমের গান (জাগতিক প্রেম, আধ্যাত্মিক প্রেম, জগৎ সংসারের প্রেম)। তারপরও তার গানের প্রধান বিষয়বস্তু অনেকটা এরকম এই পৃথিবীতে মানুষের আগমন একটা স্বল্প সময়ের জন্য। এখানে কেউই চিরস্থায়ী নয়। মানবিকবোধকে তিনি উচ্চ স্তরে স্থান দিয়েছেন যেখানে মমত্ব, ভ্রাতৃত্ব, সংহতি এবং সহনশীলতাবোধের গভীর দিকদর্শন রয়েছে, রয়েছে অসাম্প্রদায়িকতার কথাও।
হাছন রাজার গবেষণা-সাধনা ও শিল্পকর্ম ছিল গণকল্যাণমুখী। তিনি বিখ্যাত জমিদার ছিলেন, আবার সুরের সাধকও ছিলেন। কবির নিজের সৃষ্টিকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দাঁড় করিয়ে গেছেন। লক্ষণশ্রীর ধনাঢ্য জমিদার পরিবারে জন্ম নেয়া হাছন রাজা তার জীবনের বিভিন্ন সময়ের গানে সহজ-সরল স্বাভাবিক ভাষায় মানবতার চিরন্তন বাণী উচ্চারিত হয়েছিলো। তেমনি আধ্যাত্মিক কবিও ছিলেন তিনি। সব ধর্মের বিভেদ অতিক্রম করে তিনি গেয়েছেন মাটি ও মানুষের গান।
বিশ্বকবি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও হাছন রাজার গানের প্রশংসা করেছেন। ১৯২৫ সালে কলকাতায় এবং ১৯৩৩
সালে লন্ডনে প্রদত্ত বক্তৃতায় রবীন্দ্রনাথ তার গান নিয়ে আলোচনা করেন। এটি প্রমাণ
করে, হাছন রাজার সৃষ্টিকর্ম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সমাদৃত।
১৯২২ সালের
৬ ডিসেম্বর এ মরমি কবি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রীতে মায়ের কবরের
পাশে সমাহিত করা হয়। মৃত্যুর আগে তিনি নিজেই তার কবর প্রস্তুত করেছিলেন।
কবির জন্মদিনে
তার জন্মভিটায় প্রতিষ্ঠিত ‘হাসন রাজা মিউজিয়াম' একটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে রূপান্তরের
দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী, পর্যটক ও ভক্তরা। একইসঙ্গে তার গান নিয়ে
হাছন উৎসব, গানের বিকৃতি রোধেও কার্যকর উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh