এ এইচ এম নূরুল ইসলাম। ছবিঃ সংগৃহীত।
২০০১-২০০৬ সালে ছিলেন দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব। ডিগবাজি খেয়ে তিনি বনে যান আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ আমলা। এবার নতুন করে ভোল পাল্টাতে কৌশল নিয়েছেন। যদিও তার অতীত অনেকটাই অন্ধকারে নিমজ্জিত। তিনি বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র নেতা তারেক রহমান ও প্রয়াত মন্ত্রী আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তে নিয়োজিত হন। আর এই কাজের ভিতর দিয়েই তিনি আওয়ামী লীগের নৈকট্য লাভ করেন।
সাবেক
সচিব ও বর্তমান গ্যাস
ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)-এর বোর্ড চেয়ারম্যান
এবং ‘উদ্দীপন’ এনজিও’র প্রশাসক এ
এইচ এম নূরুল ইসলামের
বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে তিনি একাধিক অনিয়ম, তথ্য পাচার ও ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের
কাজ করে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। উদ্দীপনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিজুৎ কুমার বসুকে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করার ঘটনায় এ এইচ এম
নূরুল ইসলামের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ করেছেন সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা।
অভিযোগে
বলা হয়, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে সিইওকে অফিসে আটকে রেখে তার উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়। ফলে মি. বসু নিজের নিরাপত্তায় পদত্যাগে বাধ্য হন। এ সময়ে নিজের
নিরাপত্তা চেয়ে বিজুৎ কুমার বসু আবার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এদিকে
নূরুল ইসলাম প্রশাসকের দায়িত্বে আসার পর তার মূল
কাজ ছিল সংস্থায় নির্বাচন আয়োজন ও একটি গ্রহণযোগ্য
বোর্ড গঠন নিশ্চিত করা। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তিনি নির্বাচন দেননি। উল্টো সংস্থার কার্যক্রমে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। সংস্থার একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প হঠাৎ করেই বন্ধ করে দেওয়া হয়, যার ফলে কয়েকশ কর্মকর্তা-কর্মচারী অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।
সূত্র
জানায়, প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এ এইচ
এম নূরুল ইসলাম তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসান। মানবসম্পদ বিভাগের উপপরিচালক মনির হোসেনের নেতৃত্বে একটি গোষ্ঠী বর্তমানে সংস্থার আর্থিক খাতসহ যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণ করছে। ঋণ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা
নেই, নিয়োগ-বিনিয়োগে নিয়মনীতি উপেক্ষিত হচ্ছে—এমন অভিযোগ মিলেছে।
অভিযোগ
রয়েছে, এ এইচ এম
নূরুল ইসলাম তার প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে সংস্থার জমি ও অন্যান্য সম্পদ
কুক্ষিগত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। উদ্দীপনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বোর্ড কিংবা সংশ্লিষ্ট কমিটির অনুমোদন ছাড়াই।
বিগত
২০০১-২০০৬ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরপরই শুরু হয় তার প্রতি
সন্দেহ। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত না করে বিএনপির
তৎকালীন সিনিয়র নেতা তারেক রহমান ও প্রয়াত মন্ত্রী
আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তে নিয়োজিত হন।
সেই
অভিযোগ ছিল বেনামি রশিদের ভিত্তিতে, যা প্রশাসনিক রীতিনীতি
ও সংশ্লিষ্ট গোপনীয়তা লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ। শুধু তাই নয়, অভিযোগে বলা হয়, অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট সিডিতে কপি করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাচার করেন তিনি, যা এক ভয়ানক
তথ্য সুরক্ষা লঙ্ঘন ও গোপনীয়তা ফাঁসের
শামিল। এসব অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করা হয় এবং বাধ্যতামূলক
অবসর দেওয়া হয়। যদিও তার বিরুদ্ধে এই শাস্তিকে বলা
যেতে পারে গুরুতর অপরাধে লঘু শাস্তি।
নূরুল
ইসলাম বাধ্যতামূলক অবসরের বিরুদ্ধে আদালতে রিট দায়ের করেন। বিচারপতি এ বি এম
খায়রুল হক ও মো.
মমতাজ উদ্দিন আহমেদের বেঞ্চ রায়ে উল্লেখ করে, তাকে ‘অসহনীয় চাপে’ বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই রায় নিয়ে
প্রশ্ন তুলেছেন, কারণ দুই বিচারপতি ও তৎকালীন এন
আই খান ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
এদিকে
বর্তমানে ‘উদ্দীপন’-এর প্রশাসক হিসেবে
দায়িত্ব পালনে তার বিরুদ্ধে উঠেছে ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি এবং এনজিও নির্বাচন না দিয়ে একক
কর্তৃত্বে চলার অভিযোগ। সংস্থার পুরোনো কর্মকর্তারা মত প্রকাশে বাধা
পাচ্ছেন, প্রকল্প বন্ধ করে কর্মীদের বেকার করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তও তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকায় রয়েছে।
একইসাথে,
জিটিসিএল-এর মতো একটি
কোটি কোটি টাকার লেনদেন ও গ্যাস সরবরাহ
নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান হিসেবে তার নিয়োগও প্রশ্নবিদ্ধ। অতীতে যিনি গোপন নথি পাচার ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে
জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ও নেতাদের
বিভ্রান্তিকরভাবে জনসমক্ষে হেয় করেছেন, সেই তিনিই এখন একটি রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় শীর্ষ পদে আছেন—যা অনেকেরই কাছে
উদ্বেগজনক।
সংশ্লিষ্টরা
বলছেন, তার কাছে রাষ্ট্রের কোন দায়িত্ব এখন নিরাপদ নয়। নূরুল ইসলামের অতীত কর্মপন্থা, রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোপন ষড়যন্ত্র এবং তথ্য ফাঁসের অভিযোগ মিলিয়ে তাকে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একজন সচিবের কাছে রাষ্ট্র ও জনগণের বিশ্বাস
সবচেয়ে বড় সম্পদ। আর
সেই বিশ্বাসভঙ্গ যিনি একাধিকবার করেছেন, তার হাতে জনস্বার্থ কি নিরাপদ?
এ
বিষয়ে ‘উদ্দীপন’ এনজিও’র প্রশাসক এ
এইচ এম নূরুল ইসলামের
সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অফিসে গিয়ে কথা বলতে বলেন। প্রশ্ন করা হয় অফিস কোথায়—রিং রোড, কিন্তু কত নম্বর সেটা
তিনি জানাননি। তার অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোবাইলে বলা যাবে না। এটি অনেক সময়সাপেক্ষ এবং দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh