দীর্ঘ এক যুগ পর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রোববার (১ জুন) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ দলটির নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেন। একইসঙ্গে দলটির নিবন্ধন পুনর্বহাল করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দেন।
রায়ের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি লিখেন, “আলহামদুলিল্লাহ। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন-সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া ন্যায়ভ্রষ্ট রায় আজ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ বাতিল ঘোষণা করেছে। মহান রবের দরবারে নতশিরে শুকরিয়া আদায় করি... পরবর্তী প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।”
রায় অনুযায়ী, এখন নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, রায়ের সংক্ষিপ্ত অনুলিপি (শর্ট অর্ডার) সোমবারের মধ্যে পাওয়ার পর তা নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম জানান, আদালতের রায়ের আলোকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে জামায়াতের পূর্ববর্তী প্রতীক 'দাঁড়িপাল্লা' ফিরে পাবে কি না, সে বিষয়ে আপিল বিভাগ কোনো আদেশ দেননি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর, যখন নির্বাচন কমিশন দলটিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেয়। পরের বছর, ২০০৯ সালে তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ কয়েকজন ওই নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন।
২০১৩ সালের ১ আগস্ট, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজাউল হকের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে আপিল করার অনুমতিসহ সার্টিফিকেটও প্রদান করেন আদালত। পরে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এরপর জামায়াতে ইসলামী হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। তবে ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর নির্ধারিত দিনে আইনজীবী আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আপিল বিভাগ ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ হিসেবে আবেদন খারিজ করে দেন।
পরবর্তীতে দলটি বিলম্ব মার্জনার আবেদন করে—২৮৬ দিন বিলম্বে আপিল এবং ২৯৪ দিন বিলম্বে লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবনের জন্য পৃথক আবেদন করে। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত আবেদনটি শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান।
পরে ২২ অক্টোবর আপিল বিভাগ জামায়াতের আপিল পুনরুজ্জীবিত করার আদেশ দেয়। এরপর ৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় আপিলের মূল শুনানি, যা চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আজ চূড়ান্ত নিষ্পত্তি পায়।