প্রকৃতি আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর সৌন্দর্য, সজীবতা এবং জীববৈচিত্র্য আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা মানুষরা আনন্দ উদযাপনের নামে প্রতিনিয়ত প্রকৃতির এই অনন্য রূপকে ধ্বংস করে চলেছি। বিশেষ করে নতুন বছর উদযাপনের সময় আতশবাজি ফোটানো এবং ফানুসের আগুনের কারণে অনেক পাখি মারা যাচ্ছে। যা প্রকৃতির জীববৈচিত্র্যের উপর মারাত্মক খারাপ প্রভাব ফেলছে।
আতশবাজির উচ্চ শব্দ ও এর উজ্জ্বল আলোর কারণে পাখিরা আতঙ্কিত হয়। আতশবাজি ফোটানো মানুষের কাছে আনন্দের হলেও পাখিদের জন্য এটি বড় আতঙ্ক। আতশবাজির তীব্র শব্দ তার সাথে রংবেরঙের আলোর ঝলকানির কারণে শত শত পাখি আতঙ্কিত হয়ে বাসা থেকে ছুটে বেরিয়ে যায়। অতিরিক্ত আলো ও শব্দের কারণে পাখি চলাচলের রাস্তা ভুলে যায়। উঁচু দেয়াল, বৈদ্যুতিক তার, বাসা বাড়ির জানালা ইত্যাদির সাথে আঘাত লেগে অনেক পাখি মারা যায়। পাশাপাশি ফানুসের আগুনের কারণেও পাখি পুড়ে মারা যায়।
আতশবাজির শব্দে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে শিশু ও বৃদ্ধরা। এর মধ্যে হার্টের রোগী কিংবা যাদের স্ট্রোক হয়েছে, তাদের জীবন আতশবাজির শব্দের সময় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে বুকে ব্যথাসহ বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
প্রতি বছরই বর্ষবরণে আতশবাজির মাধ্যমে নতুন বছর উদযাপনের পর রাস্তায় শতশত পাখির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রতি বছর সরকারের নানা বিধিনিষেধের মধ্যেও থার্টিফার্স্ট নাইটে ঢাকার আকাশ আলোকিত হয় আতশবাজি আর ফানুসে। বিভিন্ন স্থানে আগুন লাগা ও নানা দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়।
নেদারল্যান্ডসের একদল গবেষক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের রাডার এবং পাখির সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে একটি গবেষণা চালিয়েছিলেন। যেখানে তারা আতশবাজি ফোটানো এলাকাগুলোর সাথে নীরব বা শান্ত এলাকার পাখিগুলোর গতিবিধি নিয়ে গবেষণা করেন। এতে তারা দেখতে পান, আতশবাজির শব্দ পাখিদের ওপর এক ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলে, যা কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। পাশাপাশি পাখিদের খাদ্য সংগ্রহ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়।
প্রকৃতির জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আমাদের কোনো ভুল পদক্ষেপে যেন প্রকৃতির অন্য কোনো প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অন্যদের ক্ষতি করে উৎসব অনুষ্ঠান পালন করা মোটেও কাম্য নয়। তাই আমাদের সকলের উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতনতা তৈরি করে প্রকৃতির অমুল্য সম্পদ গুলো রক্ষা করা। এরই মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে সুন্দর, নিরাপদ ও সবার বাসযোগ্য করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।