বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতির পদে পরিবর্তনের গুঞ্জন নতুন নয়। তবে গত কয়েক দিনের ঘটনা প্রবাহে সেই গুঞ্জন যেন বাস্তব রূপ নেওয়ার পথে। বিশেষ করে বুধবার রাতে সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের বৈঠকের পর বিষয়টি নতুন গতি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকালেই জানা যায়, ওই বৈঠকে বিসিবি সভাপতির পদত্যাগ প্রসঙ্গটি গুরুত্বপূর্ণভাবে আলোচিত হয়েছে।

গত বছরের আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) মনোনয়নে বিসিবির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ পান জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি নানা বিতর্কের মুখোমুখি হন। বিশেষ করে বিপিএল পরিচালনা, আর্থিক স্বচ্ছতা ও বোর্ড পরিচালনা বিষয়ে তার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে একাধিকবার।

এরই মধ্যে ক্রীড়াঙ্গনে গুঞ্জন উঠেছে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ফারুক আহমেদকে আর সভাপতি হিসেবে দেখতে চায় না। এমনকি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পর্যায় থেকে এ বিষয়ে সরাসরি বার্তা দেওয়ার কথাও চাউর হয়েছে। যদিও এখনো সরকারিভাবে এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা আসেনি, তবে পরিস্থিতি যে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে, তা আর অস্বীকার করার উপায় নেই।

তবে বিসিবির সভাপতির পদে সরাসরি সরকারি হস্তক্ষেপ বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অশনিসংকেত হতে পারে। কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) নিয়ম অনুযায়ী, বোর্ড পরিচালনায় সরকার হস্তক্ষেপ করলে সদস্য দেশটিকে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে। অতীতে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটেছে।

ফারুক আহমেদ বর্তমানে বিসিবির নির্বাচিত সভাপতি। যদিও তিনি এনএসসি মনোনীত পরিচালক হিসেবে বোর্ডে এসেছিলেন, তবে সভাপতি নির্বাচিত হন পরিচালকদের ভোটে। ফলে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে তাকে সরিয়ে দেওয়া সহজ নয়। সরকার যদি মনোনয়নে পরিবর্তন এনেও সরাসরি তাকে অপসারণ করে, তাহলে আইসিসির নজরদারিতে পড়তে পারে বাংলাদেশ।

এই বাস্তবতায় বিসিবি সভাপতির পদে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনায় সবার আগে যাঁর নাম উঠে আসছে, তিনি সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বর্তমানে তিনি আইসিসিতে দায়িত্ব পালন করছেন এবং অতীতে বিসিবির কোনো নির্বাচনে অংশ নেননি। ফলে তাকে বোর্ডে আনতে হলে এনএসসিকে তাকে প্রথমে কাউন্সিলর হিসেবে মনোনীত করতে হবে, তারপর পরিচালকের পদে এবং পরবর্তীতে সভাপতির পদে নির্বাচিত করতে হবে।

ফারুক আহমেদ নিজেও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ছিলেন এবং সেই পরিচয়েই কাউন্সিলর ছিলেন। পরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তাকে পরিচালক হিসেবে মনোনীত করে এবং বোর্ডের পরিচালকরাই তাকে সভাপতি নির্বাচিত করেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বোর্ডে যেকোনো পরিবর্তন সরাসরি ক্রিকেটের স্বার্থে না গিয়ে বরং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের অংশগ্রহণকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। তাই দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা।